বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ০৮:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের ছাতা বিতরণ কর্মসূচি পালন, মওলা হুজুর মাইজভাণ্ডারীর আদর্শকে ধারণ করলে মানবতার কাজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে সহজ হবে।” – কাজী নিজামুল ইসলাম আশেকানে হক ভাণ্ডারী, শোকর-এ মওলা মঞ্জিল – এর মাসিক সভা সম্পন্ন দেশব্যাপী চলমান তাপদাহে পথচারীদের মাঝে মাইজভান্ডারি গাউছিয়া হক কমিটি সৈয়দ কোম্পানি শাখার ব্যবস্থাপনায় শরবত বিতরণ মাইজভান্ডারী গাউসিয়া হক কমিটি বাংলাদেশ কাপাসগোলা শাখার ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী চলমান তাপদাহে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ নূর আলী মিয়ার হাট শাখার ব্যবস্থাপনায় দেশব্যাপী চলমান তাপদাহে পথচারীদের মাঝে শরবত বিতরণ এসজেডএইচএম ট্রাস্ট এর নির্দেশনায় ঐতিহ্যবাহী পটিয়া মেহেরআটি শাখা’র ব্যবস্থাপনায় শরবত বিতরণ স্বর্গীয় সতিন্দ্র লাল দাশ গুপ্তের ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী ট্রাস্টের মহিলা মাহফিল সম্পন্ন দেশব্যাপী তীব্র গরম তাপদাহে সূর্যগিরি আশ্রম শাখার সুপেয় পানি ও শরবত বিতরণ
নোটিশ :

উসূলে সা’বা : প্রসঙ্গ মাহে রমজান মুহাম্মদ মুজিবুল হক

রমজান আল্লাহর মাস। হযরত জাফর সাদেক ( রঃ) তাঁর পূর্বপুরুষদের সূত্রে বলেন নবী করীম ( দঃ) এরশাদ করেন রমজান আল্লাহর মাস।
হযরত আনাস ( রঃ) বলেন নবী করীম ( দঃ) এরশাদ করেন ” তোমরা শুধু রমজান বলোনা বরং সম্মানের সাথে বলো। কেননা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেন شهر رمضان অর্থাৎ মাহে রমজান।
রমজ অর্থ প্রচণ্ড গরম। যেহেতু আরবি মাসসমূহের নাম রাখার সময় অর্থের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রাখা হত।সম্ভত যখন এ মাসের নাম রাখা হয় তখন হয়তো প্রচণ্ড গরমের মৌষুম ছিল বিধায় রমজান করে নামকরন করা হয়েছে। অথবা এ মাসে মানুষের গুণাহ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে রমজান করে নাম রাখা হয়েছে।
আবার এইরূপও বর্ণিত আছে যে, রমজ অর্থ বর্ষাকালের বৃষ্টি। বর্ষাকালের বৃষ্টি যেমনি সমস্ত ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে পবিত্র করে ফেলে তেমনি মাহে রমজান মানুষের শরীরের সমস্ত পাপ ধুয়ে পরিষ্কার করে অন্তরসমূহকে পবিত্র করে দেয়। [ গুনিয়াতুত তালেবিন – হযরত আবদুল কাদের জিলানী ( রাহঃ) ]।

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন রমজান মাসই হল সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কুরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত ও পথনির্দেশ এবং মীমাংসার সুস্পষ্ট বাণী সমুহ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এই মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই সে মাসে রোযা পালন করে। [ সূরা বাকারা : ১৮৫ ]।
মহান আল্লাহ তাআলা আরও বলেন ” হে ঈমানদারগণ তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার “।

হযরত আবু হুরায়রা ( রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন নবী করীম ( দঃ) এরশাদ করেন ” যখন রমজান মাস আসে তখন আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। অপর এক বর্ণনায় আছে জান্নাতের দরজাসমূহ উম্মুক্ত করে দেয়া হয়। জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের শিকল দিয়ে বন্ধী করা হয়। অপর বর্ণনায় আছে ” রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। [ বুখারী শরিফ ও মুসলিম শরিফ, সূত্র মিসকাত সরিফ ]।

হযরত সাহল ইবনে সাদ ( রঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলে করীম ( দঃ) ইরশাদ করেছেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। ঐ দরজা দিয়ে শুধু রোযাদারগণই প্রবেশ করবেন। [ বুখারী শরিফ ও মুসলিম শরিফ, সূত্র মিসকাত শরিফ ]।

হযরত দাতাগঞ্জে বখশ ( রাহঃ) বলেন রোযার বাস্তবতা হচ্ছে বিরত থাকা। যেমন পাকস্থালীকে পানাহার থেকে বিরত রাখা, চোখকে কু-প্রবৃত্তির দৃষ্টি থেকে বিরত রাখা, কানকে গীবত শুনা থেকে বিরত রাখা, জিহবাকে অনর্থক কথাবার্তা ও ফাসাদ সৃৃষ্টিকারী কথা বলা থেকে শরীরকে আল্লাহর নির্দেশের বিরোধিতা থেকে বিরত রাখা হচ্ছে রোযা।

হযরত গাউসুল আজম আহমদ উল্লাহ মাইজভাণ্ডারী ( কঃ) বলেন আমি বার মাস রোযা রাখি, তুমিও রোযা রাখিও, আমার ছেলেরা সবসময় রোযা রাখে।
অর্থাৎ খোদা ভয়, তাকদিছ অন্তর পবিত্রতা এবং
হামদে বা সন্তুষ যা রোযার সারবস্তু এবং তা হযরত গাউসুল আজম মাইজভাণ্ডারীর মুরিদের মধ্যে সিয়ামের তালিম সবসময় বহাল থাকে,সুতরাং তারা সবসময় রোযাদার।
তেমনি মাইজভাণ্ডারী দর্শনের উসূলে সাবা তথা মুক্তির সপ্ত পদ্ধতির মধ্যে পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ তালিমের ইঙ্গিত বহন করে।

মাইজভাণ্ডারী দর্শন
উসূলে সা’বা তথা মুক্তির সপ্ত-পদ্ধতিঃ

ক) ফানা অানিল খালকঃ আত্মচিন্তা, আত্মনির্ভরতা, আত্মশক্তিতে বলীয়ান হওয়া, নিজের অস্তিত্বের মধ্যে ডুবে নিজকে চেনা। রমজান মাসে রাতে ইবাদতের মাধ্যমে একজন বান্দা নিজের ভূল বুঝতে পেরে নিজ কলবকে উন্নতি করে।

খ) ফানা আনিল হাওয়াঃ অনর্থ পরিহার, যে কাজ কোন সুফল দেয় না, তা থেকে বিরত থাকা।গীবত, চোগলখোরী, পরনিন্দা পরিহার ।যে কাজে বিশৃঙ্খলা ও হানাহানির সম্ভাবনা, সে কাজ বর্জন করা। নবী করীম ( দঃ) এরশাদ করেন ” শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম রোযা নয় বরং রোযা হচ্ছে অনর্থক ও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা। [ হাকিমকৃত মুসতাদরাক, ২য় খন্ড, পৃষ্টা নং ১৬১১।

গ) ফানা আনিল এরাদাঃ দুঃখে-সুখে খোদায়ী ইচ্ছাশক্তিতে আত্মসমর্পণ অর্থাৎ সন্তুষ্ট থাকা। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন ” তোমরা রাতে পানাহার কর যতক্ষণ না কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। তাই প্রতিটি বান্দা আল্লাহর ঘোষিত হুকুম মেনে অর্থাৎ আল্লাহর রেজাকে প্রাধান্য দিয়ে রোযা রাখে।

ঘ) মউতে আবয়্যাজঃ সংযম, উপবাস যাপন, কম নিদ্রা, কম আহার। আর সংযমের প্রধান সহায়ক মাধ্যম রমজানের রোযা। যা সবকিছু থেকে বিরত রাখে।

ঙ) মউতে আসওয়াদঃ আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধি, অপরের নিন্দা ও সমালোচনা সহজভাবে গ্রহণ, প্রতিহিংসা ও ক্ষোভ দমন। রাসূলে করীম ( দঃ) এরশাদ করেন ” যে ব্যাক্তি খারাপ কথা বলা ও তদানুযায়ী কাজকর্ম পরিহার করবেনা আল্লাহর তাঅালার নিকট তার ক্ষুধার্ত ও পিপাসার্ত থাকার কোন প্রয়োজন আল্লাহ তাআলার কাছে নেই। [ বুখারী শরিফ, ১ম খন্ড, হাদিস নং ১৯০৩ ]

চ) মউতে আহমরঃ লোভ, লালসা, যৌনদৃষ্টি, কামনা দমন ও সংযতকরণ। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ( রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলে করীম ( দঃ) ইরশাদ করেন ” রোযা এবং কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোযা বলবে – হে প্রতিপালক! আমি তাকে খাদ্য ও কাম প্রবৃত্তি হতে দিনের বেলায় বাধা প্রদান করেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে আমি তাকে রাতের বেলায় ঘুম হতে বাধা প্রদান করেছি। সুতরাং তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল কর। তখন উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে। [ বায়হাকী শুআবুল ঈমান ]

ছ) মউতে আখজারঃ অল্পে তুষ্টি ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন, বাহুল্য পরিত্যাগ, নির্বিলাস জীবন-যাপন। মাহে রমজানে অল্প আহারে অল্প সন্তুষ্টে নিয়ামত কামনা করে।

এই সপ্ত পদ্ধতি চরিত্রগতভাবে অর্জিত হলে সাধক খিজিরী স্তরের অলি-আল্লাহর মর্যাদা লাভ করেন ।।
রোযার উপবাস ও সংযমের নির্দেশ, আত্মশুদ্ধকামী, ব্যক্তির জন্য যেমন মহান অনুগ্রহ, তদ্রূপ রোজাতে সামর্থহীনদের জন্য মিসকিনদিগকে কেসাস বা কাফফরা দেওয়ার ব্যবস্থাও আল্লাহ তাআলার এক কৃপা বিশেষ।



ফেসবুকে আমরা

ফেসবুকে আমরা